30.9.11

মন বা হৃদয় / Heart কি ?

"হৃদয়"এই শব্দটি হৃতপিন্ডের সমার্থক হলেও চিকিত্সা বিজ্ঞান অনুযায়ী আমাদের আবেগ - অনুভূতির উত্স হৃত্পিণ্ড নয় । তবু মন বা হৃদয়ের অবস্থান যুগ যুগ ধরে আমরা বুকেই জেনে এসেছি কেন । এ বিষয়ে মনস্তত্বের ইতিহাস থেকে বিচার করলে দেখা যায় , প্রাণের অস্তিত্ব মানুষ প্রথম অনুভব করে হৃত্পিন্ডের স্পন্দনে ।মানুষ মারা গেলে এই স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় ।এই ধরনের একটা বোধ থেকেই প্রাণ - আত্মা - মন আছে বুঝতে পারি । কিন্তু উপস্তিতিটা কোথায় বুঝতে পারিনা । তাকে মানুষ বুকের ভেতর আছে বলেই ধরে নিতে শুরু করে । যদিও হৃত্পিন্ডের কাজ হল সারা শরীর থেকে রক্ত নিয়ে আবার সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়া এবং ইতিমধে ফুসফুসের দুষিত রক্তকে বাইরে পাতিয়ে দূষণ মুক্ত করা । এই ভাবে হৃত্পিণ্ড শরীরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে । অন্যদিকে হৃদয়ের বা মনের কাজই হল ভাবনার আদান - প্রদানের মাধ্যমে অন্য একজন বা অন্য এক হৃদয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা । সেদিক থেকে মিল থাকার ফলেও "হৃদয়" এই ধারণা ও "হৃত্পিণ্ড" এই শারিরী অঙ্গটির স্থান শরীরের একই জায়গায় হয়ে গেছে । তাই এখনো ভালবাসার সংকেত "পান" আকৃতির হৃদয় , যার আকৃতি কিছুটা বাস্তব হৃত্পিন্ডের সঙ্গে মিলে

সুতরাং আপনাদের মনে প্রশ্ন দেখা দেবে ,তাহলে আমাদের প্রেম - ভালবাসার চিকিত্সা বিজ্ঞান উত্স কি ? ভাষান্তরে বলতে হয় আমাদের "হৃদয়ের" কাজ করে সরীরের কোন অংশটি ? এ - প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় , সারা পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বজায় থাকে স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিস্কের মাধ্যমে প্রেম বা ঘৃনা এসবই আবেগ এবং অভিজ্ঞতা মাত্র । তাই হৃদয়ের এইসব অনুভূতির জন্ম শুধু মস্তিস্কের একটি জায়গা নয় , বরং বিভিন্ন অংশের একটা সামগ্রিক ক্রিয়ার ফল । আমাদের মস্তিস্কের নানা ভাগে রয়েছে --- সেরিব্রাম , সেরিবেলাম , ব্রেনস্টেম ইত্যাদি । মস্তিস্কের বাইরে গ্রে-মেটার ও ওয়াইট মেটার রয়েছে । ভেতরেও অবশ্য কিছু কিছু জায়গায় গ্রে-মেটার থাকে । গ্রে-মেটার যেখানে রয়েছে সেখানে নিউরন সেলের প্রাধান্য বেশি । সেরিব্রাম ব্রেনের সবচেয়ে বড় অংশ । এর পর সেরিবেলাম । সেরিবেলামের সঙ্গেও আবেগের সম্পর্ক আছে । সেরিব্রামের ভেতরে , কিছুটা নিচের দিকে লিম্বিক সিস্টেম বলে একটা অংশ আছে । অবশ্য বাইরেও কিছুটা লিম্বিক সিস্টেম রয়েছে । এই লিম্বিক সিস্টেম সকল আবেগের উত্স । তবে হৃদয়ের বিকল্প হিসাবে শুধুমাত্র লিম্বিক সিস্টেমকে চিহ্নিত করা যায় না । যেমন কোন একটি পুরুষকে দেখে কোন নারীর হৃদয়ে প্রেমের সঞ্চার হল । এই প্রেম - আবেগটি লিম্বিক সিস্টেমজাত কিন্তু আবেগের উত্স পুরুষটিকে যখন আমরা আরো বিস্তৃতভাবে বুজতে যাই , তখন কিন্তু সেরিব্রাল কর্টেক্সের ভুমিকা থাকে । ভিড় থেকে স্বতন্ত্র হয়ে একজন যে ছুয়ে গেল , একজনের হৃদয় এ বাপ্যারটা কিন্তু সেরিব্রাম এর কাজ । এখন কেউ একজন যদি কারো হৃদয়ে দোলা দিয়ে গেল তার ফলে সে মানুষটার হৃত্স্পন্দন বেড়ে গেল । রোমান্স হচ্ছে এসবের প্রেক্ষিতে লিম্বিক সিস্টেমের একটা অংশ ক্রিয়াশীল । সেই অংশটিকে হায়পথালামাস বলা হয় । সেটি অটোনমাস নার্ভাস সিস্টেমের মাধ্যমে আবেগের অভিবেক্তিগুলো সরিরে ছড়িয়ে দেয় । যার ফলে হাত ঘামতে থাকে , চোখ বিস্ফরিত হয় । বুকের ভেতর দক দক করে । হৃদয়ে ভাল বা ঘৃনা লাগার কিংবা সুখ বা যন্ত্রণার মোচড়ের কারণও লিম্বিক সিস্টেমের মধ্যের কতগুলো জায়গা । যেগুলোকে চিকিত্সা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় প্লেজার বা রিওয়ার্ড সেন্টার এবং ডিসপ্লেজার বা পানিশমান্ট সেন্টার । ইলেক্ট্রোড দিয়ে সংবেদন পাঠিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে এইসব কেন্দ্রগুলোকে । ধরা যাক একটি মেযের প্রেমিক সুন্দর একটা শার্ট পরে এলো । তাকে দেখেই মায়েটার হৃদয় নিশ্চয়ই ভরে যাবে সুখে । আমাদের লিম্বিক সিস্টেমের মধ্যে মিডিয়াম ফোর ব্রেন বান্ডল বলে একটা অংশের ভেতর সেপ্টাল এরিয়া নামক অংশটিতেই আনন্দ কেন্দ্র বা প্লেজার সেন্টারের অবস্থান
হাইপোথালামাস এর ভেতরে কিন্তু একটা জায়গা সেখানে ডিসপ্লেজার বা দুঃখদায়ক কেন্দ্র আছে । পছন্দের পুরুষ বা নারীকে বিপরীত লিঙ্গের অন্য কারো সাথে কথা বলতে দেখলে হৃদয়ে যে যন্ত্রণার মোচড় দেবে তাও এখান থেকে ।এরপর প্রশ্ন এসে যায় প্রেম হবার পর হৃদয়ে যখন কামনা জাগে তার উত্স কি ?
হাইপোথালামাস মূলত স্পর্শের পরের বাপারগুলো সিম্পাতেটিক নার্ভাস সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে যৌন হরমন ক্ষরন করায় ; হৃত্স্পন্দন বেড়ে যায় । কিন্তু সেরিব্রাল কর্টেক্স যৌন কামনাকে আটকাতে চায় , অন্যদিকে টেম্পোরাল লোবস্থিত লিম্বিক সিস্টেম ও টেম্পোরাল লোবের অনান্য অংশ এই এই কামনাকে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেয় । কারণ দেখা গেছে টেম্পোরাল লোবের কিছু অংশ বাদ দিলে বিকৃত যৌন ইচ্ছা জাগে । অতএব বলা যায় "হৃদয়" আছে মস্তিস্কের লিম্বিক সিস্টেমে । কারণ হৃদয়জাত অনুভূতির জন্যে হৃতপিন্ডে প্রভাব পড়লেও সকল আবেগের উত্স "হৃদয়" আসলে মস্তিস্কের লিম্বিক সিস্টেম । তাই বিজ্ঞান অনুযায়ী মন বা হৃদয় বলে কিছু নেই , সব হলো থকথকে একপিন্ড মস্তিস্কের কারসাজি । কিন্তু মন মানতে চায় না । কাব্য , সাহিত্য , সঙ্গীতে আমাদের হৃদয়ের জয়গান গাওয়া হয়েছে । অতএব এক কথায় সেই হৃদয়ের অস্তিত্ব মাথায় নিয়ে চলে গেলে বেপারটা কেমন ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করার মত ধৃষ্টতা হয়ে যায় না ? অতএব হৃদয়কে বুক থেকে ছাড়িয়ে লিম্বিক সিস্টেমে নিয়ে যেতে কিছুতেই আমাদের মন সায় দেয় না । তাই বলতে ইচ্ছে করে , 
  'ও বেটা মারুক , যে বলে মন থাকে শক্ত মাথায় 
আমার হৃদয় থাকে রক্তে , পাঁজরে , বুকের শিরায় শিরায় '


0 comments:

Post a Comment